কাপড়ের পুতুল তৈরি

সম্ভাব্য পুঁজি

২০০০০ টাকা থেকে ৫০০০০ টাকা পর্যন্ত

সম্ভাব্য লাভ

একটি পুতুল তৈরিতে ২০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। বিক্রি করা সম্ভব ৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

যা প্রয়োজন

রঙিন কাপড়, তুলা, উল, প্লাস্টিক, রাবার, আঠা, সুতা, কাপড়ের রং, কৃত্রিম চুল, সুচ, কাঁচি, হাতুড়ি, তার, ব্যাটারি।

প্রস্তুত প্রণালি

পুতুল এবং তার ধরন অনুযায়ী কাপড় কেটে ভেতরে তুলা দিয়ে এর আকার তৈরি করা হয়। এরপর সুতা, উল দিয়ে এর বাহ্যিক দিক সাজানো হয়। প্লাষ্টিকের  চোখ, চুল, হাত, মুখ তৈরি করে নিয়ে মূলত নকশাটাকে জীবন্ত করে তোলা হয়।

বাজারজাতকরণ

উৎসব ছাড়াও বাচ্চাদের  মন ভোলাতে অভিভাবকদের কাছে পুতুলের বিকল্প এখনো কিছু তেমন জানা নেই। বর্তমান সময়ে এসে তো শুধু বাচ্চা নয়, বড়রাও পুতুলকে সঙ্গী করে নিচ্ছে। সুন্দর তুলতুলে নরম একটা বড় পুতুল এখন ছোট-বড় সবারই প্রিয় বস্তু। বড় বড় শপিং মল ছাড়াও কিডস কর্নার বা কিডস-শপগুলোতে পুতুলের চাহিদা রয়েছে।
যোগ্যতা:    সৃজনশীল হওয়াটা জরুরি। সুত্র: http://www.luckyideabd.com/

কেস স্টাডি: পুতুল বানিয়ে পুরস্কার

অসচ্ছল সংসারে অভাব লেগেই থাকত। এর মধ্যে স্বামী চাকরি ছেড়ে দিলে বিপাকে পড়ে যাই। শ্বশুরবাড়ির সবাই আমার ওপর দোষ চাপিয়ে দিলে মানসিক যন্ত্রণা সইতে না পেরে স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসি। তখন থেকেই চেষ্টা করছিলাম কিছু একটা করার। ডিজাইনের কাজ জানতাম। এমন সময় জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের ক্ষুদ্রঋণের কথা জানতে পারি। সেখান থেকে ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে সেলাই মেশিন কিনে কাপড়ের পুতুল তৈরির কাজ শুরু করি। এখন আমার কারখানায় ২৪ জন নারী-পুরুষ কাজ করে স্বনির্ভর হচ্ছে, পাশাপাশি এ ২৪টি পরিবারের দেখাশোনা করতে পারছি এটাই আমার সার্থকতা। জিনাত আরা স্মৃতি যখন কথাগুলো বলছিলেন তখন তার কণ্ঠে ছিল দৃঢ়প্রত্যয়। চোখেমুখে ছিল দুঃসময় পেছনে ফেলে সুসময়কে জয় করার আনন্দ। কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানার সাহেবনগর গ্রামে জিনাতের কারখানায় যারা কাজ করেন তাদের প্রত্যেকের মাসিক আয় গড়ে প্রায় ৩ হাজার টাকা। জিনাতের এ উদ্যোগের ফলে মানুষের মধ্যে বিশ্বাস জন্মেছে, গ্রামেও তুলনামূলক কম পুঁজি বিনিয়োগ করে নিজের ভাগ্য উন্নয়নের পাশাপাশি দুঃস্থ মানুষের কর্মসংস্থান করা সম্ভব। কিন্তু এটি কিভাবে সম্ভব হলো? জিনাত আরার কাছে এ উদ্যোগের শুরুর গল্পটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি, ব্যবসায়ীরা চীন থেকে কাপড়ের পুতুল দেশে এনে বিক্রি করছে। ভাবলাম, কাজটি যদি স্থানীয়ভাবে করা যায় তাহলে কম দামে পুতুল বিক্রির পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ করা সম্ভব। গ্রামের মহিলাদের কর্মসংস্থান করাও আমার উদ্দেশ্য ছিল। ২০০৪ সালে ২টি সেলাই মেশিন এবং ৩ জন মহিলা নিয়ে কাজ শুরু করি। বাজারে পুতুলের চাহিদা বাড়তে থাকলে বিভিন্ন সময় সংস্থা থেকে আমি ক্ষুদ্রঋণ নিতাম। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি।’ কারখানার ২৪ জন কর্মীর মজুরি, বিদ্যুৎ বিল ও পুতুলে উপকরণের দামসহ সব খরচ বাদ দিয়ে বর্তমানে জিনাত আরার মাসিক আয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। মাত্র ১২ বছরের ব্যবধানে এক সময়ের বেকার স্বামীর স্ত্রী জিনাত এখন এখন স্বামী-সন্তান নিয়ে আর্থিকভাবে সচ্ছল গৃহিণী। অনেক পরিশ্রমে গড়া পুতুল তৈরির কারখানা জিনাতের পরিবারকে শুধু আর্থিক সচ্ছলতাই দেয়নি পাশাপাশি সামাজিক মর্যাদাও দিয়েছে। গ্রামের মহিলারা এখন নানা কাজে তার পরামর্শ নেন। গ্রামের সালিশ-বৈঠকে তার স্বামীর মতামতও গুরুত্ব পায়। কারণ স্বামীর উৎসাহ এবং প্রত্যক্ষ সহযোগিতাতেই এ কারখানার সৃষ্টি। ঘরের বউ উপার্জন করে সংসার চালাবেন গ্রামের মানুষ প্রথমে বিষয়টি সহজভাবে নেয়নি। গ্রাম্যবধূ হিসেবে জিনাত আরাকে বিভিন্ন সামাজিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম সমাজে পুতুল তৈরি অনেকেই যখন মেনে নিতে চায়নি তখন স্বামী পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। স্ত্রীর উদ্যোগে তিনি বাড়িয়েছেন সহযোগিতার হাত। জিনাত বলেন, ‘অসম্ভব ধৈর্য ও মনোবল না থাকলে এ পারিবারিক ও সামাজিক চাপ মোকাবিলা করা খুব কঠিন। আমি মহিলা বলে এখনও স্বামী ও ভাইদের বাইরে গিয়ে কাজের অর্ডার সংগ্রহ করতে হয়।’ জিনাত আরার কাপড়ের তৈরি পুতুলের চাহিদা অনেক। বিদেশি পুতুলের চেয়ে তুলনামূলক কম দাম ও দেখতে সুন্দর হওয়ায় কুষ্টিয়া ছাড়াও যশোর, ঝিনাইদহ, পাবনা, মাগুরা, রাজশাহী, নাটোর জেলায় পুতুলগুলো সরবরাহ করা হয়। ব্যক্তি পরিচয় ও ফোনের মাধ্যমেও অনেকে যোগাযোগ করে কারখানায় এসে পুতুল কিনে নিয়ে যান। জিনাত আরা কারখানার কর্মীদের নিজেই প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। বর্তমানে কারখানায় তার বিনিয়োগ প্রায় ৪ লাখ টাকা। ২০টি সেলাই মেশিন এবং পুতুল তৈরির উপকরণই কারখানার মূল খরচ। বিদ্যুতের ব্যবহার ছাড়াই এটি পরিচালিত হচ্ছে। তাছাড়া কাজের গুণগতমান ও ডেলিভারি সময় ঠিক রেখে কাজ করা হয় বলে উদ্যোগটির আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। সম্প্রতি জিনাত আরা পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সফল সৃজনশীল উদ্যোক্তার পুরস্কার পেয়েছেন। অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, পুরস্কারের কথা শুনে কারখানার সবাই খুব খুশি হয়েছে। ওদের খুশি দেখে ভালো লেগেছে। পুরস্কার বড় কাজের অনুপ্রেরণা দেয়। কারখানাটিকে আরও বড় করে আমি অন্তত ১০০ জন গ্রামের অসহায় নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই। আমার এ উদ্যোগের ফলে পরিবারে যে আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে তা গ্রামের অনেক বেকার যুবকের কাছে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।

সুত্র: http://sesu.alokitobangladesh.com/

Comment here

Your email address will not be published. Required fields are marked *