শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ে হাজার হাজার একর পতিত জমিতে গো-চারণভূমি গড়ে তোলার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পরিকল্পিত উপায়ে এসব পতিত জমিতে গো-চারণভূমি, দুগ্ধ খামার প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে শেরপুর জেলায় দুধের চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জায়গায় কোটি কোটি টাকার প্রক্রিয়াজাতকৃত দুধ সরবরাহ করা সম্ভব। জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় বিস্তীর্ণ খাস জমিতে দুধ উৎপাদনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকলেও এ ধরনের কোনো উদ্যোগ আজ পর্যন্ত গৃহীত হয়নি। জানা যায়, শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় প্রায় ৭০ হাজার একর জমি রয়েছে। এসব জমিতে বিশাল গো-চারণভূমি ও দুগ্ধ খামারসহ দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। একটি সূত্র জানায়, ঝিনাইগাতী উপজেলায় গরুর সংখ্যা প্রায় ২ লাখ, ছাগল ৮২ হাজার ও ভেড়া ১০ হাজার। বিপুল পরিমাণ অনাবাদি জমি থাকলেও এখানে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে দুগ্ধ খামার গড়ে ওঠেনি। প্রাণি সম্পদ বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘাটতি দুধের চাহিদা পূরণে এ উপজেলায় পরিকল্পিত উপায়ে দুগ্ধ খামার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্যবিমোচন ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। বর্তমানে এখানকার বিশাল পতিত জমিতে বিভিন্ন জাতের গরুর পাল বিচরণ করতে দেখা যায়। এলাকার অনেকেই দুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। ঝিনাইগাতী উপজেলায় সরকারিভাবে ডেইরি ও পোলট্রি অঞ্চল ঘোষণা করে এখানে খামার স্থাপনের দাবি জানায় এলাকার সচেতন মহল। প্রাণি সম্পদ গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে একটি গরু মাথাপিছু খাদ্য হিসেবে দুই কেজি বিচালি এবং কাঁচাঘাসসহ আধা কেজি করে খৈল, খেসারির ডাল, ধান, গমের কুড়া ও চিটাগুড় প্রয়োজন। তাদের মতে, বিদেশি ল্যান্ড সেভার নামে এক জাতের ঘাস উদ্ভাবিত হয়েছে, যা মাত্র ছয় দিনেই গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। জমিও নষ্ট হয় না। এতে গো-সম্পদের উন্নয়ন ছাড়াও দেশব্যাপী দুধের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে। আধুনিক পদ্ধতিতে গো-চারণভূমি গড়ে তোলা, দুধ আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এখান থেকে উৎপাদিত দুধ দিয়েই দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটানো সম্ভব। এ ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞ মহলের মত প্রকাশ।